"কেউ প্রতিবাদমূলক কাজ করলে তাকে জেলবন্দী করাটা আদতে প্রশাসনেরই ক্ষতি" : বিস্ফোরক অভিনেত্রী অপর্ণা সেন
রাজীব সরকার : 'পুলিশের কথায় বিশ্বাস করে প্রহ্লাদ সিং মহিলাদের বলেন–“তোমরা রাইফেলগুলি ফে দাও”। মহিলারা রাইফেল ফিরিয়ে দেয়। পুলিশেরাও ভদ্রলোক মতো গাড়িতে উঠে বসে।গাড়ি স্টার্ট করে কিছুদূর এগিয়ে থেমে যায়। সেখান থেকে নির্বিচারে গুলি চালায় ৮মহিলা, ১ পুরুষ ও ২ শিশু মারা যায়" -- ধরাযাক এটা একটা গল্প এর সুত্রপাত। তবে যে কোন গল্পই কোন না কোন সত্য ঘটনার ছায়া ঘেরা মানুষের জীবন থেকেই উঠে আসে আর এই মানুষের জীবন ঘিরেই আমাদের সমাজব্যবস্থা।
অন্যদিকে সমাজব্যবস্থাকে ঘিরেই আমাদের রাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে
“ইংরেজিতে যাকে স্টেট আর নেশন বলি ইউরোপের ইতিহাসে সেই দুটো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য বহু দিন স্বীকৃত। ভারতের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা গুলিয়ে যায়। কারণ আমাদের আধুনিক ভাষাগুলোতে রাষ্ট্র, জাতি, জনগণ, এই সব শব্দের ব্যবহারে এদের নির্দিষ্ট ভিন্ন অর্থ সহজে নজরে আসে না।বাংলায় আমরা স্টেট বলতে রাষ্ট্রবুঝি, আর নেশন বলতে, জাতি। হিন্দিতে নেশনকে রাষ্ট্র বলা হয়,
স্টেট বলা হয় রাজ্যকে। হিন্দিতে যাকে রাষ্ট্র বলা হয়, তাতে আবার স্টেট আর পিপল জুড়ে গিয়েছে।ওইভাবে বললে, বৈদিক ভারতেও রাষ্ট্র, জনগণ ও জাতির অস্তিত্ব কল্পনা করে নেওয়া যায়।
কিন্তু বাস্তবে আধুনিক রাষ্ট্র বলতে যা বোঝায়, যেখানে জনগণ সার্বভৌম, সেটা ভারতের ইতিহাস। ভারতের এক এক প্রদেশেএক এক ভাষায় আধুনিক রাষ্ট্র কল্পনা করা হয়েছে একএক ভাবে ।
আমি একথা বলতে চাইছি না যে ভারত বলেকোনও রাষ্ট্র বা জাতি নেই। কথাটা হল, মরাঠি, তামিল বা বাঙালিরা ভারতীয় রাষ্ট্রকে, অর্থাৎ একটাই বস্তুকে,আলদাভাবে কল্পনা করেছে এই আপেক্ষিকতার বাইরে এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে দাঁড়িয়ে তুমি বলতে পারবে , এটাই ‘আসল’ রাষ্ট্র, অন্য সব এরই বহু রূপ। ওই রকম কোনও অবস্থান হতে পারে না।সুতরাং বহুত্ববাদী ধারণাটাও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ইংরেজি ভাষাতে, অর্থাৎ অ্যাকাডেমিক ভাষাতে, রাষ্ট্র বা জাতির স্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু সেটাও অন্যসব
ভাষাগত ধারণার মতো আর একটা ‘ধারণা’-ই, অর্থাৎ আপেক্ষিক। এই সব কথা ভাবা জরুরি,
কারণ, যতক্ষণ বলা হবে যে ভারতীয় জাতি বা রাষ্ট্র নামক একটিই জিনিস আছে, একটাই সত্য তখনই প্রবণতা হবে, এই সত্যটা সকলের উপর চাপিয়ে দেওয়ার।আপেক্ষিকতাকে মেনে নেওয়া খুব কঠিন”। (সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা)
ম্যাক্স ওয়েবারের প্রভাববিস্তারী সঙ্গানুযায়ী রাষ্ট্র হচ্ছেএমন এক সংগঠন যা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে আইনানুগবল বলপ্রয়োগের সব মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখে, যাদের মধ্যে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী, নাগরিক, সমাজ, আমলাতন্ত্র, আদালত এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারীবাহিনী দেশ বলতে ভৌগলিক বোঝানো হয় । জাতি বলতে সেই জনগণকে বোঝানো হয়, যাদের রীতিনীতি, পূর্বপুরুষ, ইতিহাস ইত্যাদি একই। যদিও বিশেষণ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শব্দদুটি দিয়ে সেইসব বিষয়কে বোঝানো হয় যেগুলি স্পষ্টতই রাষ্ট্র-সংশ্লিষ্ট; যেমন জাতীয় রাজধানী, আন্তর্জাতিক আইন। গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল রাষ্ট্র সম্পর্কীয় বিষয়কে বিজ্ঞান নামে উল্লেখ করেছেন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়।ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশপুরোদস্তুর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। অতঃপর এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪৭সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে
আত্মপ্রকাশ করে । ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটিসার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
কিন্তু এই রাষ্ট্রকে চালায় যারা তারা কারা? তারাও তোএইসমাজ নামক ব্যবস্থা থেকে উঠে আসা কিছু মানুষ ! তারাই রাজনীতির বা ভোটাধিকারের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রযন্ত্রের ধারকবাহক।
রাষ্ট্রের ক্ষমতাবলে তাদের যে কোন নির্দেশ জন্ম নেয় ক্ষমতার। একদিকে যেমন সেইক্ষমতার অঙ্গুলিহেলনেই সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ থেকে ভাগ্য নির্ধারণ হয়, অন্যদিকে সেই তারাই ঠিক করে দেয় কোনটা আইনত ঠিক আর কোনটা বেআইনি !
কিন্তু সেই রাষ্ট্রের নাম করে দণ্ডমুণ্ডরা ক্ষমতা ধরে রাখতে যখন নিজেরাই আইনকে ঢাল করে অপরাধের আশ্রয় নেয়, তখন দায়ভার কার উপর এসে পড়া উচিত তা চিরকাল অজানা থেকে যায়।কারণ মানুষের স্মৃতিশক্তি খুবই ক্ষীণ। ধীরে ধীরে সময়ের অতলে হারিয়ে যায় সবকিছু।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের অন্তর্ধানের ২৬ বছর বাদে কলকাতায় অগস্ট মাসেরই এক ভোরে হারিয়ে গিয়েছিলেন নকশাল নেতা সরোজ দত্ত ৷ তারপরে ৪৬ বছর কেটে গেলেও সরোজ দত্তের নিখোঁজ বা হত্যা যাইবলি না কেন আজও রহস্যই থেকে গিয়েছে ৷ তবে এইরহস্যে সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য মাত্রা হল মাত্রা হল ১৯৭১সালের ৫অগস্ট ময়দানে পুলিশের গুলিতে তাঁর হত্যাকান্ডের সময় নাকি সাক্ষী ছিলেন খোদ মহানায়ক উত্তমকুমার। পুলিশের গাড়িতে করে সরোজ দত্তকে ভোর রাতে
নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ফাঁকা ময়দানের দিকে ৷ যথারীতি একসময় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে তাঁকে বলা হয়েছিল-আপনি মুক্ত, বাড়ি চলে যেতে পারেন। তখন ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য হাঁটা দিতেই পিছন থেকে গুলিকরে পুলিশ ৷ কিন্তু সেই ৫ অগস্ট সবে ভোরের আলো ফুটছে তখনই আবার ওইখানেই প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার ৷একেবারে মহানায়কের সামনেই পুলিশের এমন নির্মম হত্যাকান্ডটি ঘটে গিয়েছিল ৷ (সূত্র সংবাদপত্র)
এবার যদি সময়ের চাকা এগিয়ে নিয়ে এসে দেখা যায় তাহলে সোজা দেখা গুজরাটের একটি ঘটনায়।
গুজরাটের জামনগর জেলায় পুলিশি হেফাজতে প্রভুদাস বৈশ্নানি নামে একজনের মৃত্যু হয়। ১৯৯০ সালে জামনগর জেলায় পুলিশ সুপার ছিলেন সঞ্জীব ভাট। পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় প্রাক্তনআইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাট এবং পুলিশ কনস্টেবলপ্রবীণ সিং জালার। একই সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত আরও পাঁচপুলিশকর্মীকে দু’বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। সঞ্জীব ভাট। ২০১৫ সালে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন ।১৯৮৮-র ব্যাচের এই আইপিএস অফিসার। সঞ্জীব ভাটের গ্রেফতারী এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের
কারাদণ্ডের পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল তা বলার অপেক্ষা থাকেনা। আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের স্ত্রী শ্বেতা ভাট “#ডনবাংলা” ওয়েব নিউজ পোর্টালকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জানান “আমি আমার স্বামীর কেসে প্রায় পঞ্চাশটা ভুল বের করেছি, যা মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।পুলিশি হেফাজতে প্রভুদাস বৈশ্নানি শারিরীক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। শারীরিক অসুস্থতায় থাকা মানুষ হঠাৎ মৃত্যুকে “পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু” বলে লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হল।
মজার বিষয় ৩০-শে অক্টোবর’১৯৯০ তারিখে আমার স্বামী জামযোধপুর শহরের দ্বায়িত্বে ছিলেন না। ৩০-শে অক্টোবর’ ১৯৯০ তারিখে দাঙ্গার ঘটনায় ১৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং টাডা আইনে সেই গ্রেফতারী করেন স্থানীয় পুলিশ স্টেশন ইনচার্জ। ১৩৩ জনের ভিতর মৃত প্রভুদাস বৈশ্নানি ও তার ভাই রমেশ বৈশ্নানিও ছিলেন। মৃত প্রভুদাসকে কখনোই গ্রেফতার করেননি আমার স্বামী, এমনকি মৃত প্রভুদাসআমার স্বামী আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের কাষ্টডিতে ছিলেন না।
যার ফলে আমার স্বামী মৃত প্রভুদাস বৈশ্নানিকে কোন জেরাও করেননি। জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে উপস্থিত করার সময় মৃত প্রভুদাস ভীসনাণী একবারও অভিযোগ করেননি যে তাকে পুলিশকাষ্টডিতে মারধর করা হয়েছে।৩১শে অক্টোবর’ ১৯৯০ তারিখে ১৩৩ জন দাঙ্গাকারীকে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশে পুলিশ কাষ্টডি থেকেজেল কাষ্টডিতে পাঠিয়েদেওয়া হয়।
মজার বিষয় ১৩৩ জন দাঙ্গাকারী একজনও কেউ কোথাও কারোর কাছেও পুলিশি হেফাজতে অত্যাচারের বা অন্য কোনভাবে অত্যাচারের অভিযোগ করেনি। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ০৮ইনভেম্বর’ ১৯৯০ তারিখে ১৩৩ জন দাঙ্গাকারী আদালত থেকে জামিন পেয়ে জেল থেকে বাড়ি ফিরে আসে ।একইভাবে একজনও কেউ কোথাও কারোর কাছেওপুলিশি হেফাজতে অত্যাচারের বা অন্য কোনভাবে অত্যাচারের কোনও অভিযোগ করেনি।
১২-ই নভেম্বর’ ১৯৯০ তারিখে হঠাৎ-ই শারীরিক অসুস্থতার জন্যে প্রভুদাস বৈশ্নানিকে জামনগরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়, পড়ে রাজকোটে। হাসপাতালের কোথাও পুলিশি অত্যাচারের কথা উল্লেখ নেই । ১৮ই নভেম্বর’ ১৯৯০ তারিখে প্রভুদাস বৈশ্নানি মারা যায় হাসপাতালের এবং ফরেন্সিক
পোষ্টমর্টেম রিপোর্টেকোথাও ইন্টারন্যাল বা এক্সটারন্যাল হেমারেজের কথা উল্লেখ নেই ।হঠাৎই একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের একব্যক্তি প্রভুদাস বৈশ্নানির পোষ্টমর্টেম রিপোর্টের
আবেদন করেন এবং সেই আবেদনের ভিত্তিতে জামনগর পুলিশস্টেশনে একটি এফ আই আর হয়।
সেই এফ আই আর এর ভিত্তিতে গুজরাট সিআইডি তদন্ত শুরু করে। সিআইডি তাদের প্রাথমিক তদন্তে কোন সূত্র পাইনি আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের বিরুদ্ধে। এরপর আমেদাবাদ সিআইডি “এক্সপার্ট ওপিনিয়নের” জন্যে কিডনী স্পেশালিষ্ট ডাঃ এইচ এল ত্রিভেদি হাসপাতাল এবং পোষ্টমর্টেম রিপোর্টের কপি পাঠান। ডাঃ এইচ এল ত্রিভেদি তার রিপোর্টে জানান ‘ THERE WAS NO INDICATION OF “ RHABDOMYOLOSIS”। এরপর আবারও কনফার্ম করা হয় মৃত প্রভুদাস বৈশ্নানিকেকোনপ্রকার টর্চার করা হয়নি। এমন কি মৃতের শরীরে কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না। সুতরাং কাষ্টডিয়াল মৃত্যুর অভিযোগ ঠিক নয়। প্রভুদাস বৈশ্নানিকে যারা প্রথম গ্রেফতার করেছিল
তারাও তদন্তকারী সিআইডি-আমেদাবাদের এস পিকে জানান আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাট এবং তার টিম মৃত প্রভুদাস বৈশ্নানিকে কোনপ্রকার জিজ্ঞাসাবাদ করেননি বা মারধর করেননি। তদন্ত চলাকালীন কোন পুলিশকর্মী,পুলিশ হাজতের দ্বায়িত্বে থাকা কোন হোমগার্ড,
জেলের কোন কর্মী, জেল সুপার, জেলার বা অন্য কেউ কোন অভিযোগ করেননি।আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি।
আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের কেসে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল গুজরাত রাজ্য সরকার আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাট এবং তার টিমের বিরুদ্ধে “ SANCTION TO PROSECUTE” অনুমতি না দেওয়া স্বত্তেও প্রসিকুইসন কোর্টে ক্লোজার রিপোর্ট জমা করেন।প্রসিকুইসনের কাছে কোন তথ্যপ্রমাণ না থাকা স্বত্তেও তারা চেষ্টা করেন কোর্টে প্রমাণ করতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর কাহিনী।কোর্টে ৩০০ স্বাক্ষীর নাম থাকাস্বত্তেও মাত্র ৩২ জন স্বাক্ষীকে কোর্টে বিচার চলার সময় ডাকাহয়। শেষে আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাট হাইকোর্টে গেলে, হাইকোর্টের নির্দেশে তিনজন অতি উচ্চপদাধিকারীআই পি এস শ্রী এইচ পি সিং, শ্রী বিষ্ট এবং পি পি পান্ডেকে কোর্টে স্বাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়। প্রসিকুইসন আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণদিতে ব্যর্থহয়। এমন কি যে পুলিশ স্টেশনের ঘটনা সেই জামযোধপুর পুলিশ স্টেশনের এন কে প্যাটেল, বি এলঠাকুর, কুশল নারায়ণ প্যাটেল, ভিরাজী বালুভা, লাবুবামুলজিভাই, ওসমান কারাভাই, ভেলুভা জিলুভা, মাসাঙ্কহারজীভাই, লাখধিরসিং হালুভা, হেমাতসঙ্গ দেবীসিন,নরোত্তম কুসলভাই, নানজী জিভাভাই নিনামা, রসিকধরমসি, বিখুভা তাখতসিন, হাবিব মামাদভাই, মনুভাজরুভা রাজপুত, আফতাভ হুসেন সাফিয়া, আলাভাই সাজানভাই, পানিবেন নারসিভাই, ধীরুভা ভাট্টি সহ অনেকের স্বাক্ষ্য কোর্টে করানো হয়নি, যারা প্রচন্ড গুরুত্বপুর্ণ”।
আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের স্ত্রী সাক্ষাৎকারে আরো জানান “সুপ্রীম কোর্টে প্রসিদ্ধ আইনজীবী কপিল সিব্বাল আমার স্বামীর হয়ে মামলা লড়ছেন এবং কলকাতা থেকে সাংসদ এবং কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আমাকে সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন।
( বি দ্রঃ আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের স্ত্রী সাক্ষাৎকারে যা যা জানিয়েছেন ঠিক যেমন, ঠিক তেমন রাখা হয়েছে। তথ্য কোনপ্রকার ভুল থাকলে তা "ডন বাংলা" ওয়েব পোর্টাল কোন তথ্য যাচাই করে দেখেনি এবং কোনদায়ভারও নেই)।
যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে কোর্টকে জানানো হয়েছিল মৃত প্রভুদাস ভীসনাণীর কিডনি খারাপ ছিল। আইপিএসঅফিসার সঞ্জীব ভাট মৃত প্রভুদাসকে দীর্ঘক্ষণ ওঠবোস করিয়েছেন । সেই ধকল সহ্য করতে না পেরে কিডনি ফেল করে প্রভুদাস মারা গেছেন। যদি ধরে নেওয়া হয়
আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের স্ত্রী সাক্ষাৎকারে যা যা জানিয়েছেন সব সত্য তাহলে প্রশ্ন উঠবেই রাষ্ট্রযন্ত্রের যারা ধারকবাহক তাদের বিরুদ্ধে বা অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করলেই কি যেকোন কেস তৈরী করে দীর্ঘ জেলবন্দী করা বা রাষ্টের নামে সামাজিকভাবে হত্যা কি শতকের পর শতক ইতিহাসেরপাতা ধরে চলতেই থাকবে ?
রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কুদৃষ্টিতে যে মানুষ পড়বে,তাকেই কি ষড়যন্ত্রের তীরে বিদ্ধ করে, রাষ্ট্রযন্ত্রের নামে হত্যার নৃশংস খেলায় মানুষ মেতে ঊঠবে । যেমন ধরা যাক বিধাননগর কর্পোরেশনের বর্তমান পুরপিতা দেবরাজ চক্রবর্তী। ২০১৫-২০১৬ সালেরবিধাননগর কর্পোরেশন ভোটে এলাকার সাত নম্বরওয়ার্ডের কংগ্রেসের প্রার্থী হন।
বিধাননগর কর্পোরেশনের বর্তমান পুরপিতা দেবরাজ চক্রবর্তী “#ডন_বাংলা” ওয়েব পোর্টালকে জানান "আমি খুব সাধারণ মানুষ। আমি লো প্রোফাইলে চলতে ভালবাসি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তখন একটা ঘটনা ঘটে গেছে ঠিকই, তবে সবার কাছে আমার অনুরোধ যারা প্রতিবাদী, যারা পুলিশ প্রশাসনকে সাহায্য করে এসেছেন তাদেরকে কোন কেসে যুক্ত না করা হয়। তাতে মানুষের কাছে অবশ্যই ভুল বার্তা যায়।"
রাজনৈতিক ময়দান যখন নোংরা পাঁকে পুর্ণ হয় তখন রাস্ট্রযন্ত্রকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। ঠিক তেমন ভাবেই খুনের চেষ্টা ও দাঙ্গা বাধানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিস।ফলাফল তাকে জেলবন্দী হতে হয়। পরবর্তীকালে ভোটে জিতে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত থেকে মানুষের কাছে নিজের যোগ্যতা বজায় রাখে। সাধারণ মানুষ আজও দেবরাজ চক্রবর্তী নামে জয়ধ্বনী দেয়। কিন্তু অদৃষ্ট তার ভাগ্যে জেলজীবন রাষ্ট্রেরই কুদৃষ্টির কোপে লিখে দেয়। তাহলে প্রশ্ন যদি ওঠে জেলবন্দী করে রাষ্ট্র কি কারোর বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষ্যপ্রমাণ তৈরী করতে পারে ?
অধ্যাপক এবং সমাজকর্মী পার্থসারথী রায় জানান “এখানে কোন রাজনৈতিক পার্টির বিষয় নয়। রাষ্ট্রের গদিতে তো মানুষই বসে! তখন তারাই রাস্ট্রেই মাথা। তারা তখন চাইলেই যা খুশী করতেই পারেন। ফেব্রিকেটেট কেস, মিথ্যা তথ্যপ্রমাণ তৈরী করে জেলবন্দী করে দীর্ঘদিন একপ্রকার অত্যাচার করেন। জেলবন্দী মানুষরা অসুস্থ হলেও চিকিৎসা পান না। জেলে মারা গেলেও কোন প্রকার বিচারও তারা পায় না। সুতরাং ভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সমস্ত মানুষের ভালোর জন্যে , এটা ভাবাটা বোকামো”।
এপিডিআরের পক্ষে রঞ্জিত সুর জানান “আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের বিষয়ে অনেক অনেক রকমের বক্তব্য আছে। আমাদের সংগঠনের নিয়ম হচ্ছে যে কোন কেসে আমরা বিষয়টির উপর ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং করে তবে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটের বিষয়ে আমাদের কোন স্ট্যান্ড নেওয়া হয়নি। কারণ বিষয়টি গুজরাটের হওয়ায় আমরা তথ্য পাইওনি। তবে এটুকু বলতে পারি যে রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্রের চেয়ারে বসুক তাদের সবার চরিত্র একই হয়। যেমন ধরুন প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, রাজা সরখেলকে গ্রেফতার করে এক রাজনৈতিক দল, আর তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে অন্য রাজনৈতিক দল সরকারে এসে। আসলে বিষয়টা হল আমার কন্ঠে কন্ঠ না মেলালে তুমি আমাদের লোক নও এবং তখন তাকে রাজনৈতিকভাবে হোক বা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করা এটা ইতিহাসের পাতা থেকে আজ পর্যন্ত হয়েছে। কিষানজীকে ভুয়ো সংঘর্ষে মেরে ফেলা হয়। এমন ঘটনা ভুরিভুরি আছে। যে কোন সমাজ সংষ্কারক, প্রতিবাদী যেই হোন না কেন রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে কন্ঠ থামিয়ে দেওয়া হয় অথবা জেলবন্দী করা। প্রতিবাদীরা সর্বদাই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার। সে যেই হোক। সন্ত্রাস দমনের নামে যে সমস্ত কালাকানুন আছে তা দিয়ে রাষ্ট্র চাইলেই কুনজরে থাকা যে কোন মানুষকে গ্রেফতার করে দীর্ঘ জেলবন্দী করতে পারে”।
প্রখ্যাতা অভিনেত্রী - চিত্র পরিচালক এবং সমাজসচেতক অপর্ণা সেন জানান "আমি সহ প্রায় ৫০০ জন মিলে ৮০ বছর বয়স্ক কবি ভারাভারা রাও এর মুক্তির জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে আবেদন করেছি। ঠিক তেমনই গুজরাটের আই পি এস সঞ্জীব ভাটের মুক্তির জন্যে বার বার পিটিশনে সই করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছি। কেউ কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, তার জন্যে রাষ্ট্র তাকে যে কোন একটা কেসে ফাঁসিয়ে জেলে ঢুকিয়ে অপরাধী বানিয়ে দেবে সেটা ভারতবর্ষের মতো দেশের পক্ষে কাম্য নয়। প্রতিবাদী মানুষদের কথা সরকার শুনলে যে কোন রাষ্ট্রের পক্ষ্যে মঙ্গল। তাতে সেই রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের স্থায়িত্ব দীর্ঘমেয়াদি হয়, নতুবা পতন অনিবার্য। কোভিড ১৯ এর এই ভয়ঙ্কর দিনে ভারাভারা রাও, আই পি এস সঞ্জয় ভাট সহ সমস্ত প্রতিবাদী এবং সমাজ সচেতক মানুষদের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে সমাজের ভালো ভালো উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত করা উচিত"।
সাংসদ এবং কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জণ ভট্টাচার্য Bikashranjan Bhattacharyya জানান - রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করা মানে তা প্রশাসনের তীব্র ক্ষতি। একথা প্রশাসন যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততভাল। আই পি এস সঞ্জীব ভাট একজন সৎ - নির্ভীক পুলিশ অফিসার। যেখানে একের পর এক ফেক এনকাউন্টারে একজন পুলিশকর্মীর শাস্তি হয় না, সেখানে কাষ্টডিয়াল মৃত্যুতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড খুবই বিস্ময়কর।
অবিলম্বে আই পি এস সঞ্জীব ভাটকে ছেড়ে দেওয়া উচিত এবং একই সঙ্গে যারা সমাজকে অপরাধপ্রবণতা থেকে বাঁচানোর জন্যে লড়াই করে বা পুলিশ প্রশাসনকে সাহায্য করে, সেই তাদেরকেই পুলিশ-প্রশাসনের একটি অংশ কোনও কেসের সঙ্গে যুক্ত করে জেলবন্দী বা গৃহবন্দী করাটা চুড়ান্ত অমানবিক। তাদের মুক্তি দেওয়া হোক। নবান্নর হোম ডিপার্টমেন্টের উচিত এসব ঘটনার উপর লক্ষ্য রেখে দোষী পুলিশ অফিসারদের পুলিশ মেডেল না দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা উচিত। আসলে, প্রতিবাদী বা সমাজ সচেতকরা কোন কিছুর প্রতিবাদ করা মানেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করা নয়। আসলে তারা রাজ্য সরকারকেই কোন না কোনভাবে সাহায্য করেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়টা ভেবে দেখা উচিত"।
No comments