সরকারি জমি আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠলো উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্টদের বিরুদ্ধে
শিব শঙ্কর চ্যাটার্জি, নিউজ অনলাইন, বালুরঘাট: করোনা আবহে চলা লকডাউনের মধ্যে সরকারি জমি আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠলো উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্টদের বিরুদ্ধে। রবিবার এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে এই অভিযোগ তুললেন বালুরঘাটের সাংসদ তথা দক্ষিন দিনাজপুর জেলার বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার।
বিজেপি সাংসদের অভিযোগ লক ডাউন চলার সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা নেত্রীরা দিঘি চুরি করছে। তপন দিঘির পার্শ্ববর্তী এলাকা যে এলাকাটির মালিক কে তা জানা ছিল না, সবাই জানত সেই এলাকাটা দিঘির-ই এলাকা। সেই এলাকা হঠাৎ করে দশজন তৃণমূল নেতার নামে রেকর্ড হয়ে গেল। সকলে মিলে ভাগ বাটরা করে নিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ জানান।
দক্ষিন দিনাজপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন দিঘি তপন দিঘি। তপন ব্লকের চন্ডিপুর এলাকায় ৮৩ একর জমির উপর এই তপন দিঘি। সনষ্কারের অভাবে জেলার এই প্রাচীন দিঘি তার কৌলিন্য হারিয়ে ফেলেছিল। দীর্ঘদিন ধরে জেলা বাসির তরফে এই দিঘি সংষ্কারের দাবির পাশাপাশি এই দিঘিকে ঘিরে একটি পর্যটক কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানানো হলেও তাতে কেউ কর্নপাত করে নি। কিন্তু ২০১৯ এর ১৯ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী গংগারামপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসলে বিষয়টি তার নজরে আসে। এর পরেই তিনি জেলার প্রাচীন এই তপন দিঘি সংষ্কার করে পিছিয়ে পড়া ব্লককে অর্থনৈতিক ভাবে ঘুড়ে দাড়ানোর জন্য এখানে যাতে টুরিস্ট স্পট গড়ে তোলা হয় তার জন্য প্রাথমিক ভাবে ৩৭ কোটি টাকা মঞ্জুর করেন। এর পরবর্তিতে দিঘি সংষ্কারের কাজ শুরু হলেও তা হঠাৎ করে থমকে যায়।
অভিযোগ এরপরেই দিঘির জায়গা স্থানিও বিধায়ক তথা উত্তরবংগ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীর ঘনিষ্টদের নামে ওই দিঘির খাস জমি নিজেদের নামে রেজস্ট্রি করে নেওয়ার চেষ্টা চলে। এরপর চলতি বছর ২০২০ সালের ১৫ জুন ওই দিঘির ৭.২৮ একর অর্থাৎ প্রায় ২৫ বিঘা জমি মন্ত্রীর ঘনিষ্ট ৭ জন ব্যাক্তি নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নেন বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। এর মধ্যে মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক রিন্টু বসাক ও রয়েছেন।এছাড়া বাকি ৬ মন্ত্রীর ঘনিষ্টরা হলেন কৃষ্ণা দত্ত ধর-তৃণমূল নেত্রী,ওমর ফারুক-তৃণমূল নেতা,তাপস কুমার মন্ডল-তপন পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, দেলোয়ার হোসেন-তৃণমূল নেতা,অজয় বর্মন-6 নম্বর চন্ডিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী, সমিত বসাক-তৃণমূল নেতা, সৈফুদ্দিন সরকার-আমজাদ আলী মন্ডল এর নিকট আত্মীয়, মিঠুন মোদক-তৃণমূল নেতা ও সুব্রত দাস-তপন ব্লক অফিসের চাকরি করেন বাচ্চু হাঁসদার ঘনিষ্ঠ।
যদিও মন্ত্রীর আপ্তসহায়ক রিন্টু বসাক অভিযোগ অস্বিকার করে জানান সামনে বিধানসভা ভোট তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিজেপি তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলছে। তিনি আরও জানান তারা রায়তি সম্পত্তি কিনেছেন কোন সরকারি জমি কেনেন নি।অভিযুক্ত ওই আপ্তসহায়কের আরও দাবি পুরোটাই মিথ্যা অভিযোগ। একই সঙ্গে এদিন তিনি জানান তপন দিঘি ঐ জায়গার মালিকের মেয়ে কনিকা বসাক-এর কাছ থেকে তারা জায়গাটি কিনেছেন এবং তাদের কাছে জায়গার সঠিক কাগজপত্র আছে।
অপরদিকে নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ণ দপ্তর-এর প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাসদা বলেন এই জায়গাটা কোন সরকারি জায়গা নয়, সেটা রায়তি সম্পত্তি, রায়তি সম্পত্তি হিসাবেই ওরা দশ জন কিনেছে। তিনি আরও বলেন রায়তি সম্পত্তি যে কেউ কিনতে পারে সেটা অভিযোগ করার কি আছে। একই সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বাচ্চু হাসদা বলেন সরকারি আধিকারিকরা এত বোকা নাকি যে সরকারি সম্পত্তি রেকর্ড করে দিবে।
অপরদিকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক প্রণব কুমার ঘোষ বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই, না জেনে আমি বিষয়টি বলতে পারব না। তিনি এও বলেন সরকারি জায়গা কারো নামে রেকর্ড হবে না যদি না পাট্টা থাকে।
আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে এই ঘটনাটি জেলার ভোট চিত্রে আলাদা মাত্রা পেতে তা ধরেই নিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এমনিতেই তৃনমুল রাজ্যে ও জেলায় আমফানেরত্রান ও কোভিড নিয়ে অনেকটাই ব্যাক ফুটে। তারমধ্যে এই ঘটনা বিরোধীদের হাতে দুর্নীতির নতুন অস্ত্র তুলে দিল বলেই মনে করছে তারা।
No comments