Recent comments

ads header

Breaking News

নিজে বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্বেও, নিজের জন্মদিনে পাওয়া টাকা করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তুলে দিল বারাসাতের এই কিশোর


নিউজ অনলাইন, বারাসাতঃ জন্মদিনের উপহার হিসাবে পাওয়া টাকা দিয়ে শখ আহ্লাদ মেটানোর পরিবর্তে সেই টাকা দুস্থদের সাহায্যে এগিয়ে এলেন বিরল রোগে আক্রান্ত রজকাম্ত সাহা।উপহারের পাওয়া প্রায় ছয় হাজার টাকার পুরোটাই সে তুলে দিল মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।তার আগে আজ দুপুরে বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে খামবন্দী সেই টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পৌঁছে দেওয়ার আরজি জানায় রজকান্ত।পুলিশ সুপারও তাঁর আরজি-তে সাড়া দিয়ে আশ্বাস দেন,রজকান্তর উপহারের পাওয়া টাকার চেক পৌঁছে দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।তাঁরএই সদিচ্ছায় গর্বিত পরিবারের লোকেরা।প্রশংসায় পঞ্চমুখ পুলিশ সুপার-ও।


পরিবার সূত্রে জানা গেছে,রজকান্তর বাড়ি বারাসতের নবপল্লিতে।বয়স প্রায় ১৪ বছর।পরিবারের একমাত্র সন্তান সে।ছোটবেলায় আর পাঁচজনের মতো সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও চার বছরের মাথায় জানা যায়,রজকান্ত মায়োপ্যাথি(DMD)নামে এক বিরল রোগে আক্রান্ত।এরপর,শুরু হয় তাঁর চিকিৎসাও।বারাসতের বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া তাঁকে।এমনকি ভালো চিকিৎসার আশায় রজকান্ত-কে দিল্লির AIIMS নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা।কিন্তু,সব জায়গা থেকেই তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়,বিরল এই রোগের কোনও ওষুধ নেই।যে কোনও সময় মৃত্যু হতে পারে রজকান্ত-র।চিকিৎসকদের কাছ থেকে এই কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা পরিবারের।মনের কষ্ট বুকে চেপে ধরে ছেলের সেবাযত্ন করতে শুরু করেন সাগর সাহা ও শাশ্বতী সাহা(দে)।বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় রজকান্ত হাঁটাচলাও করতে পারেন না।বেশিরভাগ সময় হুইলচেয়ারেই সময় কাটে তাঁর।ছেলের সেবাযত্নের পিছনেই দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় ওই দম্পতির।তবে,এই কাজে তাঁদের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে সাগর বাবুর শ্বশুর বাড়ির লোকেরাও।বারাসতের মালঞ্চ এলাকায় রজকান্ত-র মামার বাড়ি।সেখানেও মাঝেমাঝে থাকে সে।তখন বারাসত বড় বাজারে দশকর্মার দোকানে মনযোগ দিতে পারেন সাগর বাবু।এরই মধ্যে ১৮ মার্চ রজকান্ত-র জন্মদিন পালন করা হয় পরিবারের তরফে।সেই জন্মদিনে আত্মীয় স্বজনদের থেকে প্রায় ছয় হাজার টাকা উপহার পেয়েছিলেন রজকান্ত।অথচ,উপহারের সেই টাকায় শখের কোনও জিনিস সে কিনেনি।সিদ্ধান্ত নেয়,লকডাউনে যে সমস্ত গরিব মানুষ কষ্টের মধ্যে রয়েছেন,তাঁদের কষ্ট লাঘব করতে উপহারের পুরো টাকা তুলে দেবে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।তাঁর এই ভাবনার কথা জানানো হয় বাবা ও মা-কে।শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা।বারাসত থানার পুলিশ মারফত খবর কানে যায় জেলা পুলিশ সুপারের কাছে।তাঁর অফিস থেকে যোগাযোগ করা হয় রজকান্তর বাবা সাগর সাহার সঙ্গে।বলা হয়,পুলিশ সুপার নিজে রজকান্তর সঙ্গে দেখা করে সেই টাকা পৌঁছে দেবে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।সেই মতো আজ দুপুরে বারাসতের মালঞ্চ এলাকায় আসেন পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।ছিলেন বারাসত থানার আইসি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য পুলিশ কর্তারা।

এদিকে,বিরল রোগে আক্রান্ত ছেলেকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে সাগর বাবু ও শাশ্বত দেবীও আসেন সেখানে।এরপর,বাবা ও মায়ের উপস্থিতিতে পুলিশ সুপারের হাতে খামবন্দী সেই টাকার চেক তুলে দেন রজকান্ত। সংবাদমাধ্যমকে সে জানায়,"কোরোনায় গরির মানুষের উপকারের জন্য আমি এই টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করলাম।জন্মদিনে পাওয়া পুরো টাকায় দিয়েছি সেখানে।বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল,কি করবি এই টাকা দিয়ে।তখন আমি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করার কথা বলেছিলাম।অন্যান্যবার জন্মদিনের পাওয়া টাকা ব্যাংকে জমায়।কিন্তু,এবার কোরোনার খবর শুনে জন্মদিনের উপহার পাওয়া টাকা দিয়ে গরির মানুষকে সাহায্য করব বলে ঠিক করি"।

অন্যদিকে,ছেলের এই উদ্যোগে গর্বিত শাশ্বত দেবী।তিনি বলেন,"আমার ছেলে আর পাঁচজনের মতো অনেক কিছুই করতে পারে না।আবার এমন কিছু করার ক্ষমতা আছে ওঁর মধ্যে,যা অন্যান্যদের মধ্যে নেই।আমাদের মাথাতেই আসেনি ও এরকম কোনও উদ্যোগ নিতে পারে।ছেলের এই উদ্যোগে আমরা খুব খুশি"।

অপরদিকে,এবিষয়ে বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,"এই ঘটনাটি একেবারে আলাদা।একজন জন্মদিনের পাওয়া টাকা  মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে তুলে দিচ্ছে,তা এককথায় প্রশংসার যোগ্য।ওর থেকে অনেকেই অনুপ্রানিত হবে"।

No comments