লকডাউনের জেরে তাঁতশিল্পীর তাঁতে জমেছে ঝুল
শিব শঙ্কর চ্যাটার্জী, নিউজ অনলাইন, বালুরঘাট: একদা যে তাতের মাকুর "খটা -খট " শব্দে এক সময় সকালের ঘুম ভাংগতো দক্ষিন দিনাজপুর জেলার গংগারামপুর এলাকার এই তাত পল্লির বাসিন্দাদের।টানা লকডাউনের ঠেলায় বর্তমানে গংগারামপুরের অধিকাংশ তাঁতশিল্পীর বাড়ির তাঁতে ঝুল জমা হয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে একাধিক সমবায় সমিতি।লকডাউনের জেরে তাঁত শিল্পী মহল্লায় মাছি তাড়াচ্ছেন শিল্পী-সহ কর্মীরা। ফলে মাথায় হাত শিল্পীদের।
শিল্প বিহীন দক্ষিন দিনাজপুর জেলায় তাঁত শিল্প অর্থনীতির অন্যতম চাবিকাঠি।১৯৭১ এর আগে থেকে জেলায় তাতের এই শাড়ি শিল্পের সূচনা হলেও ১৯৭১ এর পর থেকে ক্রমেই এই জেলায় এই বয়ন শিল্পে ঝোঁক বাড়তে থাকে।দেশভাগের সময় মূলত পাবনা থেকে ছিন্নমূল হয়ে এসে গঙ্গারামপুরে যাঁরা বসত গড়েছিলেন, তাঁরাই ওই পেশাকে আকড়ে ধরে নতুন ভাবে জীবিকার সন্ধান খুঁজে পান।
গঙ্গারামপুরে হস্তচালিত তাঁতকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে শাড়ি তৈরি হতে থাকে। অনুসারি হিসেবে চরকায় সুতো তৈরি থেকে রং, নকশা তৈরির মতো কাজেও বহু মানুষ যুক্ত হয়ে পড়েন।একদা গঙ্গারামপুরের বোড়ডাংগি, বসাকপাড়া, দত্তপাড়া, ভোদং পাড়া, স্কুলপাড়া হয়ে ইন্দ্রনারায়ণপুর কলোনির রাস্তায় হাঁটলে শোনা যেত মাকুর খটাখট শব্দ। কাছে গেলে দেখা যেত প্রায় ঘরে ঘরে তাঁত চলছে। নতুন শাড়ি-কাপড় তৈরির ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে।লকডাউনের জেরে এখন ওই পাড়াগুলি কেমন যেন ঝিমিয়ে। বন্ধ হয়ে গেছে মাকুর খটা খট শব্দ। অথচ এই তল্লাটের প্রায় ১৫০০০ এর ও বেশি মানুষ এই তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। এর সাথে যদি এই ব্লকের ঠেংগাপাড়া, ডিটল হাট, নয়াবাজার সহ অনান্য জায়গার এই তাত শিল্পকে আকড়ে ধরে রুটিরুজিতে ব্যাস্ত রয়েছেন এমন সংখ্যাটা ধরা যায় তাহলে সংখ্যাটা আরও অনেক পরিমানে বাড়তে বাধ্য। কিন্তু লকডাউনের জেরে সর্বত্রই চিত্রটা এক।
এমনিতেই মিলের সস্তা শাড়ির পাশাপাশি নদিয়ার শান্তিপুর, ফুলিয়ার তৈরি তাঁতবস্ত্রের মুন্সিয়ানার সঙ্গে টক্কর দিয়ে এই এলাকার তাঁতশিল্পকে বাচিয়ে রাখা বড় দায়।প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হামেশাই লোকসান বহর বাড়ে। আর তার জেরে কয়েক হাজার তাঁতশিল্পী কাজ হারিয়ে শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন তাদের অধিকাংশ রিকশা চালিয়ে ও হকারি করছেন।ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তখন এই করোনার লকডাউন যেন অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে জেলার তাত শিল্পিদের কাছে।
এই তাত শিল্পকে আকড়ে ধরে সারা বছরের সঞ্চয় ঢেলে আগামীর নববর্ষ, মহরম, ইদ, বাংগালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোর রমরমা মার্কেট ধরার স্বপ্ন দেখে অল্প অল্প করে দিনরাত গায়ের ঘাম ঝরিয়ে যে কাপড় বুনেছিলেন। আজ লকডাউনের জেরে ঘরেই তাতে ধুলো জমতে শুরু করেছে। লাভের মুখ দেখা তো দূর অস্ত এখন ঘরে ঘরে পরিবার নিয়ে দিন চালানোই তাদের দায় হয়ে পড়েছে। এমত অবস্থায় এই শিল্পকে বাচাতে ও তাদের খেয়ে পড়ে বাচার জন্য তাদের দিকে সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক এই আবেদন তারা জানাচ্ছেন।
এই শিল্পে লকডাউন থাবা বসাচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা। ফলে এই শিল্প ক্রমেই বিবর্ণ থেকে বিবর্ণতর হওয়ার আশংকার ভয় উদয় হচ্ছে এই শিল্পের সাথে জড়িত তাত শিল্পিদের।তাই তাদের দাবি প্রান্তিক তাঁতিদের মধ্যে সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণদান প্রদান করা হলে এ খাতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।না হলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার
No comments