এবারে নিয়ম রক্ষার পুজো হচ্ছে হিলি ব্লকের ৩ নম্বর ধলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উচ্চা গোবিন্দপুরে
শিব শঙ্কর চ্যাটার্জি, নিউজ অনলাইন: বাংগালীর শ্রেষ্ঠপুজো দূর্গাপুজো এবার করোনার দাপটে জৌলুস হারাচ্ছে দক্ষিন দিনাজপুর জেলার হিলি ব্লকের কাঁটাতারের ওপারের ভারতীয় ভূখণ্ডের দুই দেশের সম্প্রীতির দুর্গাপুজো। কার্যত বিনা আড়ম্বরে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উদ্যোক্তারা। যদিও মণ্ডপ, প্রতিমা, শব্দ, পুরোহিতের বরাত দিয়েছেন তাঁরা। তবে বিশেষ কিছু না করে নিয়ম রক্ষার পুজো হচ্ছে হিলি ব্লকের ৩ নম্বর ধলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উচ্চা গোবিন্দপুরে। আলোর রেশনাই বা চোখ ধাঁধানো মণ্ডপসজ্জা নেই তবে সীমান্তে ঢুঁ মেরে ওই পুজো চাক্ষুস করার আত্মতুষ্টির মজায় মেতে ওঠেন মানুষজন। কিন্তু এবছর একপ্রকার পরাধীন ভারতের পুজোর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আক্ষেপ বাঙ্গালির।
প্রসঙ্গত, দু’দেশের সীমান্তের শূন্যরেখা বরাবর উচ্চা গোবিন্দপুর সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির উদ্যোগে পরিচালিত দুর্গাপুজো ৬৬ বছরে পা রাখবে। স্বাধীনতার পর থেকেই দু’দেশের সীমান্তে ভারতীয় গ্রামে হিন্দু ও মুসলিমরা এক সঙ্গে পুজো করে আসছে বছরের পর বছর। জানা গিয়েছে, ১৯৫৩ সাল থেকে ওই পুজো হয়ে আসছে। অবিভক্ত দিনাজপুরের বাইশটি গ্রাম নিয়ে গ্রাম সভার পুজো হত। তখন দু’দেশের শূন্যরেখায় অস্থায়ী মন্দির গড়ে পুজো অনুষ্ঠিত হত। যদিও পরবর্তীতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নির্দেশে শূন্যরেখা থেকে প্রায় ২০ গজ ভারতীয় ভূখন্ডে সরিয়ে শুরু হয়। এলাকাবাসীরাই চাঁদা তুলে পুজো চালিয়ে আসছেন। তবে পুজোর প্রয়োজনীয় উপাচার দিয়ে সাহায্য করে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থেকে সীমানা দখলের লড়াইয়ের অনন্য নজির।
বছরের বাকি সময় ওই এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়া অনুশাসন থাকলেও দশভুজা দেবীর আরাধনার জন্য পাঁচটা দিন নিয়মে রাশ টেনে শিথিল করা হয়। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আপোস না করে সাদা পোশাকের জওয়ান মোতায়েন করে বাড়তি নজরদারি চালায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ওই পুজোয় উচ্চস্তরের অনুমতি লাগে উদ্যোক্তাদের। পুজোর দিনগুলিতে সন্ধ্যা ৬টার বদলে সময় রাত্রি ১১টা পর্যন্ত করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বহিরাগত প্রবেশের নিয়মে রাশ টানা হয়। সচিত্র পরিচয়পত্র লিপিবদ্ধ করে পুজোয় অংশগ্রহণে ছাড় দেওয়া হয়।
পুজোর দিনগুলিতে আট থেকে আশি সবাই উৎসবে মেতে ওঠেন। মণ্ডপ চত্বরে স্থানীয় শিল্পীদের দ্বারা নাটক, কীর্তন ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন কড়া হয়। নবমীর সন্ধ্যায় যুগিপর্ব গানের আসর বসে। ওই পুজোকে কেন্দ্র করে গোবিন্দপুরে বসে মেলাও। পুজো ও মেলা দেখতে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় জমান উচ্চা গোবিন্দপুরে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরাও পুজো দেখতে আসে পুজো প্রাঙ্গণে। পুজোর জোগাড় থেকে সব কিছুতেই সহযোগিতা করে ওপার বাংলার দামোদরপুর, চৌঘরিয়া, কাটলা, দাউদপুর, খিয়াদমানপুর সহ বিভিন্ন গ্রামের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। বস্তুত এমনই সময় তো বটেই পুজোর মধ্যেও সম্প্রতির অন্যন্য নজির চিত্র ঠাউর হয় উচ্চা গোবিন্দপুরের দুর্গাপুজোয়।
No comments