বর্ধমানের সেহারাবাজার রহমানিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট সারা বছর মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিল
কল্যাণ দত্ত, নিউজ অনলাইন:বর্ধমান জেলার সেহারাবাজার রহমানিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট মানুষের পাশে, মানুষের সাথে থাকার ঘোষণাকে সারা বৎসর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত করে গোটা বাংলায় এক ব্যতিক্রমী আদর্শ সমাজসেবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছে। সারা বিশ্ব যখন করোনার আতঙ্কে ভীত-সন্ত্রস্ত, লক ডাউনের প্রকোপে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত। দারিদ্রতার চাপ যখন রোজ আনা রোজ খাওয়া মানুষদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে, তখন এই ট্রাস্ট গ্রামে গ্রামে গিয়ে অসহায় মানুষদের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে। প্রতি বৎসর ‘চেতনা উৎসব’ নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমগ্র মানবমন্ডলীকে শুভ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার প্রাণবন্ত প্রয়াস এলাকায় সাড়া ফেলে। এই বৎসর লক ডাউনের মধ্যেও এই প্রতিষ্ঠান প্রমাণ করেছে – ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। চেতনা উৎসবে শিশু শিক্ষা, নারী শিক্ষা, মিশন শিক্ষা তথা আধুনিক শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার সাথে সাথে কৃষি সচেতনতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, সাহিত্য মজলিশ, সম্প্রীতি সভা দক্ষিণ দামোদরের ভূমিপুত্রদের মধ্যে যারা দেশকে, সমাজকে বিভিন্নভাবে আলোকিত করেছেন তাদের ও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের সম্বর্ধনা এবং বিশেষকরে প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার, গরীব অসহায়, গরীব অসুস্থ ও গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য – এই উৎসবের প্রাণ। মানুষের পাশে, মানুষের সাথে থাকার মহান ব্রতী হয়ে এই লকডাউনের প্রাক্কালেও এই সীমিত সংখ্যাক মানুষদের নিয়ে Body Distance বজায় রেখে প্রত্যেকের মুখে মাস্ক নিয়ে এই সবলীল অনুষ্ঠানে প্রাণের স্পন্দন সঞ্চারিত হয়। তাই তো, খন্ডঘোষ ব্লকের ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক কাজ-পাগলা কমলাকান্তি তলাপাত্র মহাশয় দৃপ্তকণ্ঠে জানান, এই ট্রাস্টির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসে মনের খোরাক পাই। গলসী বিধানসভার বিধায়ক অলোক মাজি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের পথ চলা যখন থেকে শুরু তখন থেকেই প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই আসি, সত্যিই এরা মানুষের পাশে, মানুষের সাথে থাকার মহান কাজের মানুষ। বর্ধমান সোস্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবী মহঃ আশরাফউদ্দিন (বাবু) উচ্চকিত ও দৃপ্তকন্ঠে জানান, গোটা দেশে এই প্রতিষ্ঠান বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এদের সাথে থেকে আমি মানুষের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা পাই। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ থেকে আগত মালদহের ডঃ গোলাম কিবরিয়া সাহেব বলেন, জীবনে আমি এরকম সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান আগে কখনও দেখিনি। শুধু আমি আমার সারা জীবন এই প্রতিষ্ঠানের সব ভালো কাজের সাথেই লাগাতে চাই তা-ই নয়, আমার চিকিৎসক বন্ধুদের মধ্যে যারা অগ্রজ ও অনুজ তাদেরকেও এই ট্রাস্টির যে বেসরকারী দাতব্য চিকিৎসালয়ের কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন, তাতে সবাইকে যোগ দেওয়ানোর চেষ্টা করবো। অনুষ্ঠানের শুরুতেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিন খুদে পড়ুয়া - সাজিদাহ্ পারভিন, সানজিদাহ্ পারভিন ও রোশ্মিনা খাতুন ও বৈকালিক অনুষ্ঠানে শবনম্ ইয়াসমীনের ইংরেজীতে বক্তৃতা সকলেরই ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। উদ্বোধক মাওলানা নূর আলম সাহেব প্রাঞ্জল ভাষায় ট্রাস্টির বহুমুখী কান্ডের প্রশংসা করেন। বিধায়ক অলোক মাজি, বি.ডি.ও কমলাকন্তি তলাপাত্র, মহঃ আশরাফউদ্দিন, ডঃ গোলাম কিবরিয়া – নিজেরা হাত লাগিয়ে প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ারে বসাতে সাহায্য করেন। সভার অন্তিমলগ্নে কর্মীদের হাতে বিভিন্ন গ্রামের দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হয় – তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, লকডাউনের জন্য তাদের আসতে নিষেধ করা ছিল। এই অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করতে অল্প সময়ের জন্য বক্তব্য রাখেন হাজী আশরাফ সাহেব, হাজী মাস্টার মহবুব সাহেব, হাজী মজাহার সাহেব, হাজী সিদ্দিক হাসান সাহেব, হাজী কাশেম চৌধুরী সাহেব, সদরুল আলম, মহঃ সেলিম, নজরুল ইসলাম, মোল্লা রবিয়েল হোসেন ও সফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন হাজী বদরুল আলম সাহেব, সঞ্চালনা ও আখেরী দুয়া করেন ট্রাস্টের সম্পাদক এম. জি. আসপিয়া (হাজী কুতুবুদ্দীন) সাহেব।
No comments