কোরাইন্টাইন সেন্টার করার জন্য এবার মন্দিরের দরজা খুলে দিল মন্দির কতৃপক্ষ
শিব শঙ্কর চ্যাটার্জি, নিউজ অনলাইন, বালুরঘাট: করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কমছে রোগী রাখার জায়গা। এই অবস্থায় দক্ষিন দিনাজপুর জেলার জেলা সদর বালুরঘাটে একটি মন্দির কর্তৃপক্ষ তাদের মন্দিরকে হোম কোয়ারান্টিন কেন্দ্র তৈরির জন্য ছেড়ে দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
করোনা আতঙ্কে মন্দির, মসজিদ, গীর্জা বন্ধ। বন্ধ প্রার্থনা নামাজ পড়া থেকে পূজা আরাধনাও। ভিড় হীন এখন দেবালয়গুলি। কিন্তু এর মধ্যেও উল্টো ছবি বালুরঘাটে। নিজেদের উদ্যোগে মন্দিরে ভগবানের সেবা যত্ন চালিয়ে মানব সেবায় এগিয়ে এসে অভিনব উদ্যোগ নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছে বালুরঘাটের জলঘর অঞ্চলের গংগাসাগর এলাকার একটি মন্দির কর্তিপক্ষ।করোনাকে করবো জয় এই মনোভাব নিয়ে তারা মন্দির সংলগ্ন ক্যাম্পাসের ভেতর তাদের নিজস্ব দোতলায় বিশাল হলঘরে হোম কোয়ারান্টিন সেন্টারের জন্য ছেড়ে দিয়ে অন্যন্ন নজির গড়েছে। মন্দিরের এই চার হাজার বর্গফুটের এই আবাসিক ঘরকে ব্যবহার করেই লড়াই চালাতে চান করোনার বিরুদ্ধে তারা ।এভাবে ধর্মস্থান ছেড়ে দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার জন্য সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসি।
লকডাউনের জেরে ভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কাজ হারিয়ে সর্বশ খুইয়ে হাজার হাজার শ্রমিক তাদের নিজ নিজ ঘরে ফিরছে। তেমনি মহারাষ্ট্র থেকে সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রায় ৬০ জন শ্রমিক আড়াই লক্ষ টাকা ভাড়া দিয়ে বাস নিয়ে গত সপ্তাহেই জেলায় ফিরেছিলেন। এই শ্রমিকরা বালুরঘাট ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতাল খাসপুর থেকে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে, চিকিৎসকদের হোম কোয়ারিন্টিনে থাকার নির্দেশ যুক্ত চিঠি নিয়ে তাদের যে যার নিজ গ্রামে ফেরেন। এই ৬০ জনের মধ্যে ২২ জন বালুরঘাট ব্লকের জলঘর গ্রামপঞ্চায়েতের গঙ্গাসাগর গ্রামের বাসিন্দা। অনেক ঝক্কি সামলে তারা জেলায় ফিরলেও, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেও অনেক হয়রান হতে হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। তবুও সে সব মিটিয়ে গ্রামে ঢুকতে গেলে এবার গ্রামবাসীরা তাদের বাধা দেয়। সোয়াব পরীক্ষা না হলে কোনভাবেই গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে গ্রামবাসীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। অবশেষে বাধ্য হয়েই তারা নিজ গ্রামে ফিরে ফাঁকা আকাশের নিচেই রাত কাটান। কিন্তু তাদের এহেন অমানবিক দুর্দশা দেখে পরদিনই ওই পরিযায়ীদের পাশে এসে দাঁড়ান স্থানীয় মন্দিরের সন্ন্যাসী। গ্রামবাসিরা যেখানে করোনার ভয়ে তাদের সন্তানদের গ্রামে ঢুকতে দেননি। সেখানে করোনাকে করবো জয় এই মনোভাব নিয়েই তিনি আশ্রমের দরজা খুলে দেন। তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করেন নিজের মন্দিরে। এই ২২জনের এখন ঠাই হয়েছে মন্দির চত্বরের আশ্রমের দ্বিতল ভবনে।গ্রামবাসীরা তাদের সাধ্যমত খাবার দিয়ে যাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের।ফলে কোনরকমের হোম কোয়ারিন্টিন জীবন-যাপন করতে হচ্ছে ওই পরিযায়ীদের। এলাকার প্রাথমিক স্কুল বা নিজের বাড়িতে ঠাঁই না পেলেও আশ্রমের কর্মকর্তারা তাদের ঠাঁই দেওয়াই খুশি শ্রমিকরাও। যদিও আশ্রম কর্তৃপক্ষ পরিযায়ীদের দেখভালের কাজ করলে ও সরকারি তরফে তাদের কোন দেখভাল করা হচ্ছেনা বলে ফিরে আসা পারিযায়ী শ্রমিক মানুষজনদের মধ্যে ক্ষোভ জমছে।
আশ্রমের সন্ন্যাসী সদানন্দ গিরি বলেন, জীব সেবাই শিব সেবা। তাই মানুষের দুর্দিনে মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। মানুষ বাঁচলে তবেই ভগবান বাঁচবেন। তাই এই বিপদে পড়া মানুষগূলোর জন্যে আশ্রমের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই সুস্থই আছেন।
বাংলায় এই মুহূর্তে ৫৮২টি সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে।কিন্তু গতকাল থেকে পারিযায়ী শ্রমিকদের আসার ঢল নামায় এই সরকারি স্থল যে সংকুলান হয়ে পড়তে বাধ্য তা সবার জানা। এছাড়াও বাংলা জুড়ে ১ লক্ষ ৯১ হাজার ৯৯০ জন মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন বা আছেন। যার মধ্যে ৮২ হাজার ৪৩৩ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হিসাবে সার্টিফিকেট পেয়েছেন।পারীযায়ী শ্রমিক ট্রেন ঢোকার পর হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সংখ্যাটা যে আরও বাড়বে তা ধরেই নেওয়া যায়।
স্বাভাবিক ভাবেই করোনা লড়াইয়ে এই মন্দির কর্তিপক্ষকে দেখে উৎসাহিত হতে পারে অন্য মন্দির, মসজিদ, গির্জাগুলি। এ কথা ঠিক, বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠন গরিবদের জন্য নিয়মিত খাবার দিচ্ছে, কিন্তু এই ভাবে ধর্মস্থান করোনার জন্য ছেড়ে দেওয়ার উদাহরণ সম্ভবত বাংলায় এই প্রথম।
No comments