লকডাউনের জেরে নিজভূমিতে পরবাসী হয়ে দিন কাটাচ্ছে এই মানুষগুলো
শিব শঙ্কর চ্যাটার্জী, নিউজ অনলাইন, বালুরঘাট: এমনিতেই নিজভূমে পরবাসি তার উপর সারা বছর ওরা থাকে কাঁটাতারের ওপারে।কাটাতারের বেড়ার ওপারে থাকার দরুন থাকতে হয় কঠোর অনুশাসনে। তাই বছরভর ওরা সমস্যায় জর্জরিত। এরই মধ্যে লকডাউন। লকডাউনের জেরে সেই সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। কার্যত দমবন্ধ অবস্থা ওদের।নিত্যপ্রযোজনীয জিনিস কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। ফলে আরও সমস্যা বেড়েছে।
এই সমস্যা সমাধানে পরিবার পিছু একজন করে ভারতের মূল ভখণ্ডে যেতে দেওযার দাবি নিয়ে হিলির সীমান্তবর্তী গ্রাম শ্রীকৃষ্ণপুর, জামালপুরে বিক্ষোভ দেখালেন কাঁটাতারের ওপারের বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও প্রধান। উত্তেজিত মানুষ কাঁটাতারের বেড়া কেটে ফেলার চেষ্টা করেন। সীমান্তের ফটকও ভাঙার চেষ্টা করা হয়।যদিও বিএস এফ ও স্থানিও প্রশাসন খবর পেয়ে ছুটে এসে কোন রকমে তাদের ক্ষোভকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। কিন্তু কতদিন এভাবে ধামা চাপা অবস্থায় চলবে সে নিয়েও জোর আলোচনা চলছে সব মহলে।
সীমান্তের কাটাতারের বেড়ার ওপারের স্থানীয় বাসিন্দা কাজলি মাহাতো, বানো মাহাতো, সুলতান মণ্ডলদের অভিযোগ , ‘সীমান্ত সিল করে দিয়েছে প্রশাসন। কৃষিকাজ, ব্যাংক, আপত্কালীন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে চিক্যিস্যা নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমরা এখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছি। তাদের আরও অভিযোগ পঞ্চায়েত থেকে পাঠানো সামগ্রী স্থানীয় দোকানদার বেশি দাম নিচ্ছেন। গবাদিপশুর খাবারে সংকট দেখা দিয়েছে।ওই স্থানিও বাসিন্দাদের আরও জানান তাদের পরিবার প্রতি একজনকে মূল ভারতে প্রবেশে ছাড়পত্র দেওয়া হোক । যাতে তারা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ বাজার থেকে নায্য দামে ক্রয় করে আনতে পারি। এমত অবস্থায় আমরা কঠিন সমস্যার মধ্যে দিন গুজরান করতে বাধ্য হচ্ছি।
হিলি বিডিও সৌমেন বিশ্বাস বলেন, ‘ঘটনার খবর পেযে ছুটে যাই। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয। বিষযটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে’।অপরদিকে বিএস এফ এর তরফে জানানো হয়েছে চিক্যিস্যা ও আপৎকালীন জরুরি পরিষেবা দেওয়ার বিষয়ে তাদের সবরকম সাহায্য করার পাশাপাশি এমব্যুলেন্স পরিষেবা দিয়েও তারা সীমান্তবাসিদের সাহায্য করছেন। এপারে কৃষিকাজ করতেও তাদের দেওয়া হচ্ছে। তবে লকডাউন চলার জন্য উপর মহলের নির্দেশ মোতাবেক তারা কাজ করছেন।
উল্লেখ থাকে ১০ এপ্রিল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসন এবং বিএসএফ বৈঠক করে হিলি সীমান্ত সিল করে দেয়। পাশাপাশি কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের যাতায়াতে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রশাসন। জরুরিকালীন ছাড়া ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সীমান্তের ওপারে খাবার সামগ্রীর জোগান স্বাভাবিক রাখতে পঞ্চায়েত থেকে মুদি, সবজির দোকানে সামগ্রী পাঠানোর উদ্যোগ নেওযা হয় প্রশাসনের তরফে । জিরো লাইন বরাবর অতিরিক্ত বিএসএফ জওযান মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী ও।
এখন দেখার ৩ রা মে লকডাউন ওঠার পর কতদ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে কাটাতারের বেড়ার ওপারে নিজভূমে পরবাসে হয়ে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের জীবন যাত্রা।
No comments